আমার কাছে স্বাধীনতার মানে


                   আমার কাছে স্বাধীনতার মানে


স্বাধীনতা এই চার অক্ষরের শব্দের মাঝে রয়েছে সাগরসম বিশালতা। স্বাধীনতা মানে মুক্ত আকাশে উড়তে থাকা পাখি,যে পাখির একমাত্র সীমানা আকাশ। যে পাখি মানেনা কোনো বাধা।উন্মুক্ত ভাবে আকাশে উড়তে থাকে তার চেতনাকে সঙ্গী করে! আমার কাছে স্বাধীনতা মানে পাখির মতো আকাশে উড়তে থাকা। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে কখনো কোকিলের মিষ্টি সুর, আবার কখনো দীপ্ত কন্ঠে অধিকার আদায়।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে ভোরের আকাশে সূর্যের আলোর ছটা।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে টগবগে রক্তের উত্তাপ যা শিরা উপশিরা বেয়ে পৌছে যাবে হ্রদয়ে।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে জাদুঘরে ঝুলে থাকা আসাদের রক্তমাখা শার্ট, যা অন্তরে জাগায় কম্পন।


স্বাধীনতার মানে বিশাল।স্বাধীনতা হতে পারে ব্যাক্তি স্বাধীনতা, জাতিগত স্বাধীনতা,শ্রেণীবিশেষের স্বাধীনতা।কখনো স্বাধীনতার মানে হচ্ছে নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষার লড়াই।স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার উন্মেষ হতে পারে।স্বাধীনতার মধ্যে রয়েছে মুক্তির পদচিহ্ন।স্বাধীনতা জাগায় অধিকারের সপ্ন।মূলত স্বাধিকারবোধের পূণাঙ্গ রূপই হচ্ছে স্বাধীনতা।


বাংলা ও বাঙালির কাছে স্বাধীনতার মানে


     বাঙালির কাছে স্বাধীনতার চেতনার উন্মেষ ঘটার প্রথম কারণ হলো স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রশ্ন। নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র সত্তা হুমকির মুখ থেকে রক্ষার চেতনা থেকেই স্বাধীনতার বীজ বপন শুরু করে বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের এর মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের রাস্তায় বিচরন শুরু হয়।রফিক,শফিক, জব্বার সহ নাম না জানা অনেকে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল স্বাধীনতার জন্য। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে ভাষা আন্দোলনে প্রান হারানো আন্দোলনকারীর বুকের পাঁজর হতে ঝরে যাওয়া তাজা রক্ত।যে রক্ত অবিরাম ধারায় ঝড়েছে প্রিয় স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে '৭১ এর রক্তাক্ত বাংলার প্রান্তর। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে বাবা মায়ের যুদ্ধে যাওয়া  সন্তানের জন্য প্রতিক্ষার দিন গোনা,যা কারো জন্য হয়তো কোনদিন ও শেষ হয়নি।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে মা বলতে শেখার আগেই অবুঝ শিশুর মায়ের লাশের উপর বসে অঝোরে কান্না।যে কান্না আধোও থেমেছে কিনা জানিনা আমরা।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে অসুস্থ পিতামাতাকে ছেড়ে দেশ মায়ের জন্য স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লড়াই। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে দামাল ছেলেদের হানাদার বাহিনীদের পরাজিত করে 'জয় বাংলা ' বলে উল্লাস।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের সেই দীপ্ত কন্ঠ।

     

 

  স্বাধীনতা সংগ্রামের সব যোদ্ধার রয়েছে নিজেদের গল্প।কিছু গল্প স্থান পেয়েছ বাংলার স্বাধীনতার  ইতিহাসের পাতায়। কিছু রয়ে গেছে আড়ালে।


ইতিহাসের পাতা হতে দুই শহিদের কাহিনি


                          সাফিয়া বেগম 

               শহিদ  মুক্তিযোদ্ধা আজাদের মা

জুরাইন গোরস্তানে গেলে দেখা যাবে এই লেখাটি।

এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ লেখা নয়।এই লেখায় রয়েছে এক মায়ের আবেগ, স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়া একমাত্র ছেলের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।মা তার একমাত্র সন্তানকে উৎসর্গ করেছেন দেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্য। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধএ  হারানো ছেলের পরিচয়ের উর্ধে মায়ের আর কোনো পরিচয় হতে পারে না এটা মায়ের বিশ্বাস। তাই মৃত্যুর পর নিজের কবরের নামফলকে শহিদ সন্তান আজাদের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার কথা বলেছিলেন। শেষ বার সন্তানকে যখন দেখে আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়েছিল,কিন্তু মা পরেরবার ভাত নিয়ে গিয়ে পাননি আজাদকে,তাই আজাদের মৃত্যুর পর ১৪ বছর বেচে থাকলেও মা ভাত মুখে তোলেননি কোনোদিন।

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে সাফিয়া বেগম তথা এই বীর মায়ের আবেগ।



         আম্মা, দেশের এই রকম অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও,আমি হয়তো যাবো শেষ পর্যন্ত।কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে।আমেরিকা থেকে বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে ইঞ্জিনিয়ার হবো।কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না তুমি কি তা চাও আম্মা?

              -শহিদ শফি ইমাম রুমি

     

গেরিলা বাহিনীর সদস্য শফি ইমাম রুমি।স্বাধীনতার লড়াই করার জন্য নিশ্চিত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানিকে উপেক্ষা করে রুমি।১৯৭১ সালে ৩০ আগস্ট এর পর থেকে নিঁখোজ রুমি।আমার কাছে স্বাধীনতা মানে রুমির বিবেকের সেই ভ্রুকুটি যার কারণে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি ফিকে হয়ে গিয়েছিল রুমির কাছে।



      স্বাধীনতা বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছে উন্নতির শিখরে।বাংলা মায়ের সন্তানেরা স্বাধীনতার সূর্যটি ছিনিয়ে এনেছিল বীরদর্পে।বাংলার লাল সবুজ সেই পতাকা মহাকাশেও শোভা পায়। স্বাধীনতা দিয়েছে বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।বিশ্বমঞ্চে যখন বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয় তখন হ্রদস্পদন হয় দ্রুত, শিহরিত হয় শরীর।এই শিহরণে রয়েছে গর্ব।স্বাধীনতার সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে সঙ্গী করে বাংলা এগিয়ে যাবে আরো বহুদুর।সেদিন বাংলার আকাশ বাতাস,রক্তমাখা প্রান্তর জানিয়ে দিবে শহিদদের 

"দেখো, তোমাদের ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতা আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে "।


Comments

Popular posts from this blog

সাফিয়া বেগম- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজাদের মা

প্রফুল বিলোরে - এমবিএ চা ওয়ালা